যেখানেই যে সময়েই মুমিনরা থাকুক না কেন তারা কাফেরদের হাতে অত্যাচারিত

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ (সা:)-এর উম্মতেরা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে সেই একই পরিস্থিতির সম্মুখীন। আল্লাহ তায়ালা ইসলামী আন্দোলনের বিজয় সংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত করেননি। কিন্তু বিজয় এবং তাঁর সাহায্য পাওয়ার জন্য কতগুলো গুণাবলী অর্জনকে বান্দার জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। যদি বান্দাহ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এই শর্তগুলো পূরণে সফল হয়, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাহকে সাহায্য করার ওয়াদা আল্লাহ তায়ালা নিজেই করেছেন। সুতরাং বাতিলের ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত দেখে হতাশ না হয়ে মুমিন বান্দার উচিত আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য গুণাবলী অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। আল্লাহ বলেন- ‘আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।’ (৩:১৩৯)
মক্কায় তখন এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। ইসলাম গ্রহণ করলেই তার ওপর বিপদ-আপদ ও জুলুম-নিপীড়নের পাহাড় ভেঙে পড়তো। কোন গোলাম বা গরীব মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে ভীষণভাবে মারপিট এবং কঠোর নির্যাতন-নিপীড়নের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত করা হতো। সে যদি কোন দোকানদার বা কারিগর হতো তাহলে তার রুজি-রোজগারের পথ বন্ধ করে দেয়া হতো। সে যদি কোন প্রভাবশালী পরিবারের কোন ব্যক্তি হতো তাহলে তার নিজের পরিবারের লোকেরা তাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো ও কষ্ট দিতো এবং এভাবে তার জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলতো। এ অবস্থায় মক্কায় এক মারাত্মক ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। এ পরিস্থিতি যদিও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী সাহাবীগণের অবিচল নিষ্ঠার মধ্যে কোন প্রকার দোদুল্যমানতা সৃষ্টি করেনি তবুও মানবিক প্রকৃতির তাগিদে অধিকাংশ সময় তাদের মধ্যেও একটা মারাত্মক ধরনের চিত্তচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে যেতো। এ ধরনের অবস্থার একটা চিত্র পেশ করে হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত বর্ণিত একটি হাদীসে। তিনি বলেন, ‘যে সময় মুশরিকদের কঠোর নির্যাতনে আমরা ভীষণ দুরবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়েছিলাম, সেসময় একদিন আমি দেখলাম নবী (সা:) কাবা ঘরের দেয়ালের ছায়ায় বসে রয়েছেন। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করেন না? একথা শুনে তার চেহারা আবেগে-উত্তেজনায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো এবং তিনি বললেন, ‘তোমাদের পূর্বে যেসব মুমিনদল অতিক্রান্ত হয়েছে তারা এর চাইতেও বেশি নিগৃহীত হয়েছে। তাদের কাউকে মাটিতে গর্ত করে তার মধ্যে বসিয়ে দেয়া হতো এবং তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে দুই টুকরা করে দেয়া হতো। কারো অঙ্গ-প্রতঙ্গের সন্ধিস্থলে লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়ানো হতো, যাতে তারা ঈমান প্রত্যাহার করে। আল্লাহর কসম, এ কাজ সম্পন্ন হবেই, এমনকি এক ব্যক্তি সান’আ থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত নিশঙ্ক চিত্তে সফর করবে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় তার মনে থাকবে না।’ (বুখারী, আবু দাউদ ও নাসাঈ)

Post a Comment

Thank you for your Comment

Previous Post Next Post

Contact Form