সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত (নিয়ম এবং গুরুত্ব)

bangla islamic blog, ialamer alo, hadith, quran, islam, bangl, articale, dua, salat, shariah, islamic song, jihad, question, health, help islamic books, islamer alo blog, islamiclantern.blog, islamiclantern.blogspot.com, blogger, islamic blogger, muslim blogger, bangla blogger, islameralo.org

সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত, একটি গুরুত্বপূর্ন নফল সলাত। বলা হয়ে থাকে এটি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নফল সলাত। প্রথম হলো তাহাজ্জুতের সলাত এবং দ্বিতীয় হলো এই সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত । আসুন জেনেনেই এই সলাতের গুরুত্ব এবং সলাতের বিভিন্ন নিয়মকানুন ।  

সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত কেন এত গুরুত্বপূর্ন?

চাশতের সলাতের গুরুত্ব বুঝতে চলুন প্রথমে একটি হাদিস দেখে নেই, হাদিস টি আবু যর রাঃ থেকে বর্ণিত
আবূ যার (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই এমন অবস্থায় প্রভাব করে যে, তাকে তার প্রত্যেক জোড়াগুলোর পরিবর্তে সাদকাহ দেয়া লাগে। কাজেই প্রত্যেক বার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা সাদকাহ হিসেবে বিবেচিত হয়, প্রত্যেক বার ‘আল্লাহু আকবর’ বলা সাদকা হিসেবে গণ্য হয় এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাও সাদকাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এসবের মুকাবিলায় চাশতের দু’রাকআ’ত নামাযই হবে যথেষ্ট”। (মুসলিম ৭২০)
অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে আমাদের প্রতিটি জোড়ার জন্য সাদকাহ করতে হয় আর তা আল্লাহু আকবার, সুবাহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লালাহ ইত্যাদি বলার, সৎ কাজ করা, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার মাধ্যমে হয়ে থাকে । আর সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত আদায়ের মাধ্যে এই সাদকাহ আদায় হয়ে যায় । 
তাছাড়া রাসূল সাঃ এই সলাতের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং তিনিও প্রায় নিয়মিতই এই সলাত পড়তেন। তাছাড়া অপর এক হাদিসে আবু হুরায়রা রাঃ বলেন-
তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হলঃ) ১. প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা। ২. সালাতুয-যোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা)। ৩. বিত্‌র (সালাত) আদায় করে শয়ন করা
(সহিহ বুখারী, তাহাজ্জুদ অধ্যায়, ১১৭৮)

অর্থাৎ সালাতুত দোহার এত গুরুত্ব যে, রাসূল সাঃ আবু হুরায়রা রাঃ কে এ ব্যাপারে ওসিয়্যাত বা বিষেশ আদেশ করে গেছেন এবং তিনি এই ওসিয়্যাত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পালন করার সিন্ধান্ত নিয়েছেন । 
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে এই সলাতের গুরুত্ব অন্য সকল নফল সলাত থেকে বেশি ।

চাশতের নামাজ কখন পড়তে হয় ?

চাশতের নামাজ পড়তে হয় সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২০ পর (যখন হারাম সময় পার হয়ে যায়) যোহর পর্যন্ত । যদিও এ সময় ইশরাকের সলাত রয়েছে ২ রাকাত । এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে,
আসিম ইবনে যামরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আলী (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিনের (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তোমরা আসেভাবে আদায় করার ক্ষমতা রাখো না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে আদায় করবে। এরপর তিনি বললেন, আসরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে তেমন হলে তিনি ২ রাক’আত (ইশরাক সালাত) আদায় করতেন। আবার যোহরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে (পূর্ব দিকে সূর্য ততটা উপর হলে) তিনি ৪ রাক’আত (চাশতের সালাত) আদায় করতেন। যোহরের পূর্বে ৪ রাক’আত ও পরে ২ রাক’আত এবং আসরের পূর্বে ৪ রাক’আত আদায় করতেন। প্রতি ২ রাক’আতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, নবীগণ এবং যেসকল মুমিন-মুসলিম তাদের অনুসরণ করেছেন তাদের প্রতি সালাম প্রেরণের মাধ্যমে ব্যবধান করতেন

(সুনানে নাসাঈ, হা/৮৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬১)

অর্থাৎ সূর্য যখন পূর্ব আকাশ থেকে উপরে উঠতে শুরু করে, যেমনি ভাবে আসরের সময় সূর্য পশ্চিম আকাশে যেখানে থাকে তেমন পূর্ব আকাশে সূর্য আসলে ইশরাকের সলাত আদায় করতেন ।  আর তার থেকে উপরে উঠলে সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত আদায় করতেন । 
আরো সহজ করে বললে, সকাল ৬:৩০ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত এমন সময় কালে ইশরাকের সলাত এবং ৯ টা থেকে যোহরের আগ পর্যন্ত বা সূর্য মাথার উপর উঠা পর্যন্ত চাশতের সলাত আদায়ের সময় । 

চাশতের সলাত কত রাকাত?

চাশতের সলাত ২ থেকে শুরু করে যত ইচ্ছা দুই দুই করে পড়া যায় । তবে অনেক হাদিস থেকে জানা যায় আল্লাহর রসূল সাঃ ৪ রাকাতের নিচে চাশতের সলাত পড়তেন না । তাই সর্বনিম্ন ৪ রাকাত পড়া সহীহ হবে । 
যেমন হাদীসে এসেছে, মু’আযা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, 
আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি চাশতের সালাত আদায় করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ- ৪ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আল্লাহ চাইলে কখনো কখনো বেশিও পড়তেন
সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৮২; বায়হাকী, হা/৪৬৭৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৫২৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০০৫

এছাড়াও অপর এক হাদিসে এসেছে আল্লাহর রাসূল সাঃ চাশতের সলাত ১২ রাকাতও পড়তেন, যেমন- আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যদি কখনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রা বা প্রবল ঘুমের চাপের কারণে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তাহলে তিনি দিনে (চাশতের সময়) ১২ রাক’আত সালাত আদায় করে নিতেন
শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৮৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৬৪৫

সুতরাং চাশতের সলাত আমাদের সাধ্য মত ২ থেকে যত বেশি পড়া যায় পড়তে পারবো তবে সর্বনিম্ন ৪ রাকাত (যদি সমস্যা না থাকে) পড়া উত্তম হবে । 

চাশতের সলাত পড়তে কোন নিয়ম আছে কি?

চাশতের সলাত অন্য সকল নফল সলাতের মতই একটি সলাত এটি পড়তে আলাদা কোন নিয়ম কানুন নেই । সাধারন নফল সলাতের মত পছন্দ মত সুরা মিলিয়ে পড়া যায় । 

পরিশেষে একটি বিষয় বলতে চাই তাহলো আজ কাল আমরা মুসলিমরা এই নফল ইবাদতের আমল একদম করি না বললেই চলে । সত্যি কথা বলতে আমরা অনেকেই এমন এখনো আছি যারা একবারো জীবনে এই সলাত আদায় করি নি । তাই আসুন এই সুন্নাহকে আমরা জীবিত করি আমাদের আদায় করার মাধ্যমে যার ব্যাপারে রাসূল সাঃ এত গুরুত্ব দিয়েছেন যে তিনি বলতেন "আমার মা-বাবাকে জিন্দা করে পাঠানো হলেও আমি এই আট রাক’আতকে (চাশতের সলাত) ছাড়ব না।" (মুয়াত্তা ইমাম মালিক পরিচ্ছেদঃ ৮) 
আমাদের যদি অত্যন্ত ব্যাস্ততায় দিন চলে যায় অথবা আমরা যদি আমাদের জীবিকা বা চাকরি নিয়ে বেশি ব্যাস্ত থাকি, তবুও যেন ছুটির দিন গুলোতে আদায় করি । ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আমাদের উত্তম প্রতিদান দিবেন । আমিন । 




Azum

Azum is a student with interests in Business, Finance, Islamic Studies, Technology, and Healthcare. He enjoys reading books and sharing his insights on blogs. When he's not typing away, he likes to spend time with his pets, seeking balance and relaxation in his daily life.

2 Comments

Thank you for your Comment

  1. মাশা-আল্লাহ খুব মূল্যবান পোস্ট

    https://play.google.com/store/apps/details?id=com.abctech.mrp_passport_status_check

    ReplyDelete
  2. মাশাআল্লাহ আসলেই খুব সুন্দর একটি পোস্ট

    ReplyDelete
Previous Post Next Post

Contact Form