অতি চালাকের গলায় দড়ি
এ জগতে অনেক মানুষ আছে, যারা অন্যের
ভাল দেখতে পারে না। অন্যের সুখে তাদের
গা জ্বালা করে। ফলে নিজের নাক
কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের চেষ্টা করে।
পরের অকল্যাণের চিন্তা সদা তাদের
মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। অনেক সময়
অন্যের ক্ষতি সাধন
করতে গিয়ে নিজেই সেই ক্ষতির
শিকার হয়। এ সম্পর্কেই নিম্নের
গল্পটির উপস্থাপনা।
অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে বাস
করত এক বুড়ি। বুড়ির ছিল এক নাতী।
বুড়ি তার নাতিকে খুব ভালবাসত।
বুড়ি একদিন তার মেয়ের
বাড়ি বেড়াতে যায়। তার নাতী তার
বাড়ি দেখাশুনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
থেকে শুরু করে সব কাজই করে থাকে।
বুড়ি যেমন করে সবকিছু রেখে গিয়েছিল
তার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। পাঁচ-
ছয়দিন পর বুড়ি বাড়ি আসে। তার
নাতীর কাজ দেখে সে খুব খুশি হয়।
নাতীকে আদর করে এবং তার জন্য
কায়মনোবাক্যে আল্লাহ্র দরবারে দো‘আ
করে।
একদিন বুড়ি বাড়ীর
পাশে পাতা কুড়াতে গিয়ে দেখে একটি মেয়ে গাছের
তলায় বসে কাঁদছে। বুড়ি তার
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন
কাঁদছ? মেয়েটি বলল, আমার মা-
বাবা কেউ বেঁচে নেই, আমি ইয়াতীম।
কিন্তু মেয়েটি ছিল ভীষণ
মিথ্যাবাদী। তার মা-বাবা সবাই ছিল,
কিন্তু
সে বাড়ি থেকে ঝগড়া করে এসে ঐ
গাছতলায় বসে কাঁদছিল।
বুড়িকে সে মিথ্যা কথা বলেছিল।
মেয়েটিকে দেখে বুড়ির খুব দরদ হ’ল।
সে মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ি গেল।
পরে তার নাতীর সাথে মেয়েটির
বিয়ে দিল। বিয়ের কিছুদিন পর
মেয়েটি বুড়িকে সত্য কথা বলল এবং তার
বাবার বাড়ি যাবার বায়না ধরল।
এরপর থেকে মেয়েটি মাঝে মাঝে তার
বাবার বাড়ি যেত। তার এক ছোট ভাই
তার কাছে আসা-যাওয়া করত।
সে সংসারের জিনিসপত্র গোপনে বাবার
বাড়ি নিয়ে যেত। কিন্তু কেউ
বুঝতে পারত না। এতে ধীরে ধীরে বুড়ির
সংসার ধ্বংস হ’তে থাকে। বুড়ির সঞ্চয় সব
ফুরাতে থাকে। ইতিমধ্যে তার নাতীর
এক কন্যা হয়। বুড়ি খুব চিন্তিত।
সে ভাবে এমনিতেই তো সব দ্রুত
ফুরিয়ে যাচ্ছে, আবার এই শিশুর খাদ্য
জুটবে কিভাবে? তার নাতী খুব কাজ
করে কিন্তু অভাব দূর হয় না? বুড়ির
নাতবউ গোপনে সংসারের জিনিস তার
বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ায় তাদের
তাদের সংসারের এ দৈন্যদশা। সে নিজের
সংসার এমনকি তার কন্যার কথাও
চিন্তা করত না। এদিকে তার
মেয়েটি বড় হ’তে থাকে। সে অনেক
চালাক-চতুর।
একদিন বুড়ি একটা কাপড় বাজার
থেকে কিনে নিয়ে এনে ঘরে তুলে রাখে।
বুড়ির নাতবউ
তা দেখে ফেলে এবং মনে মনে ভাবে তার
ভাই আসলে তা বাবার
বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু সেদিন
তার ভাই আসেনি। তাই সে তার
মেয়েকে বলল, মা তুমি তোমার নানার
বাড়ি যাও এবং এই শাড়িটা তোমার
নানীকে দিয়ে এস। মেয়ে বলল,
এটাতো বড় মায়ের শাড়ি।
মেয়েকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নাতবউ
শাড়িটি বাবার বাড়ি দিয়ে পাঠায়।
বুড়ি এসে দেখে তার কাপড়টি নেই। তখন
সে অঝোরে কাঁদতে থাকে।
মেয়েটি এসে জিজ্ঞেস করে, বড়
মা তুমি কাঁদছ কেন? বুড়ি সব খুলে বলল।
মেয়েটি বলে, আমাকে ক্ষমা কর। অতঃপর
সে সবকথা বলে দেয়। এভাবে সংসারের
বিভিন্ন জিনিস খোয়া যাওয়ার উৎস
ও কারণ বুড়ির কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়।
সে তার নাতী আসলে সব খুলে বলে।
আড়ালে থেকে বুড়ির নাতবউ শুনে ফেলে।
বুড়ির নাতী তখন তার বউকে মারধর
করে, তাকে শাসন করে। তার এই কাজের
জন্য যারপর নেই ভৎর্সনা করে।
এতে সে ক্ষেপে যায়
এবং মনে মনে ভাবে বুড়িকে জব্দ
করতে হবে। একদিন বুড়ি তার এক
আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যায়।
বুড়ির নাতী কাজের
সন্ধানে বাড়ী থেকে অনেক দূরে চলে যায়,
ফেরে অনেক রাত করে। এসেই
সে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবে সুযোগ
পেয়ে বুড়ির নাতবউ ঘরে বিরাট গর্ত
খোড়ে। তাতে কাঁটা, কাঁচের টুকরা, গোবর,
কাঁদা-পানি সহ অনেক কিছু
দিয়ে রাখে।
উপরে আলতোভাবে পাটি বিছিয়ে রাখে,
যাতে সহজে বুঝা না যায় যে, নীচে গর্ত
আছে।
বুড়ি এলে তার নাতবৌ তাকে খুব সমাদর
করে, যা বুড়ি কোনদিন পায়নি।
এতে বুড়ি অবাক হয়, খুশীও হয়। কিন্তু
মতলব বুঝতে পারে না। এবার
বুড়িকে ঘরে নিয়ে যায়। তাকে ঐ
স্থানে বসতে দেওয়া হয়। বুড়ি এক
কোণে জড়সড় হয়ে বসে।
এদিকে নাতবৌ বুড়িকে ধাক্কা দিতে গিয়ে নিজেই
ধপাস করে গর্তে পড়ে যায়। বুড়ি ভয়
পেয়ে দৌড়ে বাইরে যায়। তারপর
নিজেকে সামলে নিয়ে নাতবৌকে তুলতে যায়।
কিন্তু ততক্ষণে সবশেষ।
বুড়ি তাকে তুলতে পারে না।
ইতিমধ্যে তার নাতী এসে পড়ে।
ঘরে গিয়ে দেখে তার বউ
গর্তে মরে পড়ে আছে। ঘরের মাঝে গর্ত
দেখে সে বউয়ের কু-মতলব সব বুঝতে পারে।
Tags
Story