পতাকাবাহী মুসআব ( আমরা তো সেই জাতি )

মুসআব ৷ ধনীর দুলাল মুসআব ৷ প্রাচুর্যের মধ্যে যার জীবন গড়ে উঠেছে সেই মুসআব সত্যের পথ দুঃখের পথ গ্রহন করে ফকির হলেন ৷ সহায় নেই, সম্বল নেই, আত্মীয়স্বজন তার প্রতি বিরূপ ৷ একমাত্র সম্বল একমাত্র পাথেয় তার আল্লাহর প্রেম, সত্যের বাণী ৷




তাকে বন্দী করে রাখা হলো ৷ বেপরোয়া নির্যাতন চালানো হলো তার দেহ ও মনের উপর ৷ বন্দীর শৃংখল ভেঙ্গে একদিন তিনি চলে গেলেন সুদুর আবিসিনিয়ায় অন্যান্য মুসলিম মুহাজিরদের সাথে ৷
বহুদিন পর তিনি এলেন মদীনায় ৷ তার জন্য অপেক্ষা করছিল অশেষ দারিদ্র, দুঃখ-কষ্ট, কিন্তূ অদম্য তার প্রাণশক্তি ৷ পরণে ভালো কাপড় নেই, শতছিন্ন একটি পোষাক কোন মতে তার দেহের আবরু রক্ষা করছে ৷

এমনি ভাবে একদিন একটি মাত্র
 বস্ত্রে কোনরুপে দেহ ঢাকতে ঢাকতে  তিনি পথ চলছেন । হযরত মুহাম্মাদ সাঃ তার এই দুর্দাশা নীরবে চেয়ে দেখছিলেন, তার মনে পড়ে গেল মুসআবের ঐশ্বর্যপূর্ণ বিলাসী জীবনের কথা । কত সুখ, আরাম আয়েশের মধ্যে তার জীবন কেটেছে । আর আজ ? রাসূল সাঃ এর চোখে অশ্রু দেখা দিল ।

উহুদের যুদ্ধক্ষেত্র । একদিকে মুষ্টিমেয় বিশ্বাসী মুসলমান, অন্যদিকে মক্কার কুরাইশগণ । তুমুল যুদ্ধ চলছে । মুসলমানদের পতাকাবাহী মুসআব । কুরাইশদের প্রচন্ড আক্রমনে মুসলমানদের এক সংকটময় মুহুর্ত দেখা দিয়েছে- বিশ্বাসের চরম পরিক্ষা । নির্ভিক মুসআব ইসলামের পতাকা হস্তে যুদ্ধের প্রচন্ডতা অগ্রাহ্য করে দাড়িয়ে আছেন । একজন শত্রুর আঘাতে তার ডান হস্ত কেটে পড়ে গেল । বাম হাত দিয়ে তিনি পতাকা ধরে রাখলেন । সে হাত কাটা গেল । দু হাতের অবশিষ্টাংশ দিয়ে মুসাআব প্রাণপণে ইসলামের পতাকা বুকে ধরে রাখলেন । এ পতাকা নমিত হতে পারে না, যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ তা অসম্ভব । অমাস্ত মরুবাত্যায় তখন গর্বভরে নিশান উড়ছে । এ নিশান অবহেলিত হতে পারে না । শত ঝড় ঝাঞ্চা বয়ে যাক, মৃত্যুর অশ্রান্ত গর্জন শুনা যাক, তবু সত্যের পতাকা নমিত লাঞ্ছিত হতে পারে না । কখনও না প্রাণ গেলেও না । অকস্মাৎ একটি তীর এসে মুসআবের বক্ষ ভেদ করে গেল । শহীদী রক্তে মরুর বক্ষ রন্ঞ্জিত করে তিনি হলেন মৃত্যুঞ্জয়ী, আত্মা তার লাভ করলো অমরত্বের অনির্বচনীয় আস্বাদ । 


Post a Comment

Thank you for your Comment

Previous Post Next Post

Contact Form