সবচেয়ে গতিশীল ও দ্রুত বিকাশমান ধর্ম
হিসেবে বিবেচিত ইসলামের অগ্রযাত্রা
ঠেকানোর জন্য নানা ধরণের প্রচার মাধ্যমে
ইসলাম-বিদ্বেষী প্রচারণা জোরদার করেছে এই
মহান ধর্মের শত্রুরা। গল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্র
ও এমনকি কম্পিউটার গেমসকেও তারা
অপব্যবহার করছে এই হীন উদ্দেশ্যে। কিন্তু তা
সত্ত্বেও পাশ্চাত্যে প্রতিদিনই ইসলামের
ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেক সত্য-পিয়াসী
নরনারী। আজ আমরা এমনই একজন
সৌভাগ্যবতী মার্কিন নও-মুসলিম নারী
কারিমা রাজির অভিজ্ঞতা তুলে ধরব।
ইসলাম নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে গবেষণা ও
অনুসন্ধানের পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন
কারিমা রাজি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
"ইসলাম গ্রহণ কয়েক বছর আগেও আমার কাছে
ছিল একটি অবিশ্বাস্য বিষয়। কিন্তু
আল্লাহর পক্ষ থেকে সুপথ প্রদর্শন স্থায়ী ও
বিচিত্র বিষয়। এরই আলোকে এটা এখন আমার
কাছে স্পষ্ট যে, আমার পুরো জীবন এগিয়ে
যাচ্ছিল এই স্পর্শকাতর মুহূর্তের দিকে। আর এই
পথ-পরিক্রমার তিনটি বছর একদিকে ছিল
কঠিন ও অন্যদিকে আনন্দের। এই সময়ে নিজের
ব্যাপারে ও বিশ্ব সম্পর্কে আমার চিন্তাধারায়
ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। আমার কোনো কোনো
ধারণা শক্তিশালী হয়েছে এবং কোনো কোনো ধারণা
বা বিশ্বাস পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে।"
মার্কিন নও-মুসলিম নারী কারিমা রাজি
আরো বলেছেন, কখনও কখনও এটা অনুভব করতাম
যে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি, আবার কখনও
এমনও মনে হত যে, এই পথ আমার জন্য আগেই
ঠিক করা হয়েছে। তাই এ পথকে আমি স্বাগত
জানাতাম। সেই কয়েক বছরে ইসলামের কোনো কোনো
দিক আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছিল। পড়াশুনা ও
গবেষণা ধীরে ধীরে আমাকে সেই দিনটির
দিকে নিয়ে গেল যেদিন আমি পাঠ করলাম
শাহাদাতাইন তথা 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য
নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) হলেন তাঁর প্রেরিতপুরুষ
বা রাসূল'।
মিসেস রাজি আরো বলেছেন,
'ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হওয়া আগেই জীবনে
আধ্যাত্মিক পরিতৃপ্তির সন্ধান করতাম।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য বা পাওয়া সম্ভব এমন কিছুই
আমার সামনে কিংবা কাছে ছিল না। আরো
ভালোভাবে বলতে গেলে বলতে হয় আমি ছিলাম
একজন স্যেকুলার বা ধর্ম-নিরপেক্ষ ব্যক্তি।
আমি নৈতিকতার ওপর জোর দিতাম,কিন্তু
কখনও সেগুলোকে আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে
সম্পর্কিত করতাম না। জীবনের কোনো লক্ষ্য
আছে কিনা তাও জানতাম না। আমার পরিবার,
বন্ধু ও সঙ্গীরা আমাকে সমর্থন করত।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিষয়ে আনন্দ
পেতাম। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ সফল
ছিলাম। কিন্তু ঘটনাক্রমে মুসলমানদের সঙ্গে
পরিচয়ের সূত্র ধরে ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা শুরু
করি। আমি যতই মুসলমানদের সঙ্গে যোগাযোগ
করছিলাম ততই তাদের অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি
ও সুদৃঢ় ঈমান আমাকে আকৃষ্ট করছিল। প্রথমে
ভাবতাম যে, ইসলাম সহিংসতা ও লিঙ্গ
বৈষম্যের ধর্ম। কিন্তু মুসলমানদের সঙ্গে
পরিচিত হওয়ার পর আমার এই ধারণা
পরিবর্তিত হয়। ফলে ইসলাম সম্পর্কে ধীরে
ধীরে আরো জানার সিদ্ধান্ত নেই।'
মার্কিন নও-মুসলিম নারী কারিমা রাজি
ছিলেন একজন নারীবাদী বা কথিত নারী
অধিকারের কট্টর সমর্থক। তাই ইসলাম নারীকে
কিভাবে দেখে তা ছিল তার জন্য গভীর
আগ্রহের বিষয়। রাজি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
'আমি ভাবতাম যে ইসলাম নারীর অধিকারকে
পদদলিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়
শুনেছিলাম যে মুসলিম নারীদের ঘরের বাইরে
যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না এবং তাদেরকে
মাথায় ওড়না পরতে বাধ্য করা হয়। আমার কাছে
এটাও মনে হত যে, পর্দা বা হিজাবের অজুহাতে
পুরুষরা নারীর অধিকার লঙ্ঘন করছে। অথচ
বাস্তবতা হল হিজাব নারীর বিনম্রতা ও
ব্যক্তিত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যম।
পড়াশুনার মাধ্যমে আমি সবিস্ময়ে এটা
জানলাম যে, ইসলাম নারীর অধিকারকে তো
ধ্বংস করেই না, বরং বাস্তবে তাদেরকে পাশ্চাত্যের
চেয়েও বেশি স্বাধীনতা দিয়েছে। ইসলাম সেই
খ্রিস্টিয় সপ্তম শতকেই নারীকে এমন
অধিকার দিয়েছে যে, আমরা কেবল বর্তমান
শতকে তা অর্জন করেছি। যেমন, নারীর সম্পদ ও
মালিকানার অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার,
তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদের অধিকার, বিয়ের
ক্ষেত্রে নারীর অনুমতি বা নিজের সিদ্ধান্ত
নেয়ার অধিকার ইত্যাদি। অবশ্য পশ্চিমা
সূত্রগুলো ইসলামকে অত্যন্ত কঠোর ও বাস্তবতা-
বিবর্জিত ধর্ম বলে প্রচার করে আসছে।'
মার্কিন নও-মুসলিম নারী কারিমা রাজি
ইসলামের অন্য কিছু আকর্ষণীয় দিক প্রসঙ্গে
বলেছেন, 'নারী অধিকারের প্রতি ইসলামের
বিস্ময়কর উদারতা ও সম্মানের বিষয়টি
আবিষ্কারের পর ইসলামের নবী ও কুরআন
সম্পর্কে পড়াশুনা শুরু করি। আমার প্রশ্ন ছিল
এটা যে, মুহাম্মাদ (সা.) কি কেবল একজন
ব্যতিক্রমধর্মী নেতাই ছিলেন? নবী হওয়ার
আগেই তিনি ছিলেন দয়ালু। নিজের ও
ভবিষ্যত যুগ সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট দিক-
নির্দেশনা আমার পূর্ব-ধারণাগুলো পাল্টে দেয়।
শত্রুকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে তাঁর ধৈর্য ও
দৃঢ়তা এবং বিজয়ের সময় বিনম্রতা তাঁকে
পরিণত করেছে এক অতুলনীয় মহামানবে।
তিনি চূড়ান্ত বিজয়ের সময়ও যখন দুনিয়ার
সম্পদকে পরিপূর্ণভাবে ভোগ করতে পারতেন
তখনও তা করতেন না এবং নিজ অনুসারীদের
মধ্যে যে ছিল সবচেয়ে দরিদ্র তার চেয়েও কম
ছিল মুহাম্মাদ (সা.)'র সম্পদ। এরপর পবিত্র
কুরআন সম্পর্কেও আরো গভীর জ্ঞান অর্জন
করলাম। নিজেকে তখন প্রশ্ন
করেছিলাম,সাধারণ কোনো মানুষ কি এমন উচ্চ
পর্যায়ের বইকে বুঝতে সক্ষম? প্রকৃতি ও
বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনাগুলো
আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। বিশ্বনবী (সা.)'র
বিস্ময়কর জীবন সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে
পারলাম। এও স্পষ্ট হল যে ইসলামের দৃষ্টিতে
নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এ ধর্ম
তাদের অধিকারকে সমান বলে মনে করে।'
মার্কিন নও-মুসলিম নারী কারিমা রাজি
আরো বলেছেন: ইসলাম কেবল নারী-পুরুষের
সাম্যেই নয়, সব জাতি ও সমাজের সব শ্রেণীর
মধ্যেই সমান অধিকারে বিশ্বাসী। ইসলামের
দৃষ্টিতে খোদাভীতি বা তাকওয়ার দিকটি
ছাড়া মানুষের মধ্যে কেউ কারো চেয়ে বড় নয়।
এভাবে নিজের প্রতি ও নিজের
সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি আস্থাশীল বা
আত্মবিশ্বাসী হলাম।
বৈপ্লবিক ধর্ম ইসলাম ও এর বৈপ্লবিক
বিধানগুলো অজ্ঞতার নিন্দা জানায় এবং ঈমান
ও নৈতিকতাকে ছড়িয়ে দেয়। ইসলামের
শিক্ষাগুলো মানুষের নানা চাহিদা মেটায় ও
সেগুলো মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ
হওয়ায় এ ধর্ম কালোত্তীর্ণ ও সার্বজনীন
হয়েছে। চির-সজীব ও প্রাণবন্ত এই ধর্ম
সম্পর্কে পড়াশুনার পর এ ধর্মকে পরিপূর্ণ এবং
সার্বজনীন দেখতে পেয়ে কারিমা রাজি
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
'আমার জীবনের দিনগুলো খুব দ্রুত কেটে
যাচ্ছিল। তাই ভাবলাম আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক
বিশ্বাস না নিয়ে মৃত্যু বরণ করা উচিত নয়।
আমার বুদ্ধিবৃত্তি বা বিবেক এটা বলে যে,
ইসলামের সত্যতার নিদর্শন রয়েছে পবিত্র
কুরআনে ও বিশ্বনবী (সা.)'র জীবনে। আর
এইসব নিদর্শন বা প্রমাণ এত শক্তিশালী যে
তা উপেক্ষা করা যায় না।
এভাবে তখনই ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য মনে মনে
পুরোপুরি প্রস্তুতি নেই এবং কয়েক দিন পর
শাহাদাতাইন পড়ে মুসলমান হয়ে যাই। আমি
আমাদের ম্যাগাজিনে এটা লিখি যে, অবশেষে
আমি ইসলামের মধ্যে আধ্যাত্মিক আস্থা ও
বিশ্বাসের মূল্য খুঁজে পেয়েছি। মহান আল্লাহকে
ধন্যবাদ দিলাম এ জন্য যে তিনি
আধ্যাত্মিকতা ও চিন্তার স্বাধীনতার
মাধ্যমে আমাকে ইসলামকে বেছে নেয়ার সুযোগ
দিয়েছেন।'
সূত্র : অাই অার অাই বি