নেপালের ভূমিকম্প ও আমাদের শিক্ষণীয়


গত ২৫শে এপ্রিল শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১২-টা ১১-মিনিটে ঘটে গেল উপমহাদেশের শতাব্দী কালের ইতিহাসে ভয়ংকরতম ভূমিকম্প। যার উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৮০ কি.মি. পূর্বে। এটি ছিল বিগত ২০৫ বছরের ইতিহাসে কাঠমান্ডুতে ৫ম শক্তিশালী ভূকম্পন। এরপরই সেখানে থেকে থেকে ৫০টি ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়ে গেছে। গত ১২ই মে মঙ্গলবার দুপুর ১-টা ৫মিনিটে পুনরায় প্রচন্ড ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে পুরা উপমহাদেশ। এরও উৎপত্তিস্থল ছিল কাঠমান্ডু থেকে ৮৩ কি.মি. পূর্বে এভারেস্ট-এর কাছে নামচি বাজার। প্রথমটির কেন্দ্রস্থল ছিল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৪.৮ কি.মি. গভীরে এবং এবারেরটির ছিল ১৯ কি.মি. গভীরে। এ সময় ২৪ ঘণ্টায় ৩১ বার কেঁপে উঠে পৃথিবী।

রাজধানী কাঠমান্ডু তার অবস্থান থেকে কিছুটা সরে গেছে এবং হিমালয় পর্বত তার অবস্থান থেকে কিছু নীচে নেমে গেছে। এভাবে লাগাতার ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবী ক্রমেই এগিয়ে চলেছে মহাপ্রলয়ের দিকে। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী নেপালের ২৫শে এপ্রিলের প্রচন্ড ভূমিকম্পের চাইতে ৩২ গুণ তীব্রতা নিয়ে খুব শীঘ্রই আসছে আরেকটি মহা ভূমিকম্প। যাতে পৃথিবীর মানচিত্র বদলে যাবে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুরা অঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূগর্ভস্থ টেকটনিক প্লেট সমূহের পরস্পরের সংঘর্ষে ভূমিকম্প হয়। বিজ্ঞানের দৌলতে কারণ জানা সহজ হয়েছে। কিন্তু কারণ যিনি ঘটান, তিনি কে এবং কেন ঘটান, তার জবাব বিজ্ঞান দিতে পারেনি। অতএব এরূপ ঘটনা মানুষকে বাধ্য করে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস আনতে।






দূর অতীতে নবী শু‘আইব (আঃ)-এর কওম মাদিয়ানবাসীদের উপর আল্লাহর গযব নেমে এসেছিল ভূমিকম্পের মাধ্যমে (হূদ ১১/৯৪; আনকাবূত ২৯/৩৭)। সেই সাথে ছিল সপ্তহব্যাপী ঝড়-ঝঞ্ঝা ও অবশেষে বজ্রনিনাদ (আ‘রাফ ৭/৮৮)। যা তাদেরকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছিল। কি অপরাধ ছিল তাদের? আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা মাদিয়ানের প্রতি তাদের ভাই শো‘আয়েবকে পাঠিয়েছিলাম। সে তার স্বজাতিকে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নেই। তোমাদের নিকটে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে প্রমাণ (অর্থাৎ নবুঅত) এসে গেছে। অতএব তোমরা ওযন ও মাপ পূর্ণ মাত্রায় দাও। মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্ত্ত কম দিয়ো না এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার পর তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’ (আ‘রাফ ৭/৮৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা মাদিয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শো‘আয়েবকে প্রেরণ করেছিলাম। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও বিচার দিবসে (প্রতিদান) কামনা কর। আর তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না’। ‘কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলল। ফলে ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করল। অতঃপর তারা স্ব স্ব গৃহে মরে পড়ে রইল’। ‘আর আমরা ‘আদ ও ছামূদ জাতিকে ধ্বংস করেছি। তাদের পরিত্যক্ত বাড়ী-ঘরই তোমাদের জন্য এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। তাদের অপকর্ম সমূহকে শয়তান তাদের নিকট শোভনীয় করেছিল। অতঃপর তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিয়েছিল। অথচ তারা এর পরিণাম বুঝত’ (আনকাবূত ২৯/৩৬-৩৮)। তিনি আরও বলেন, ‘তারা বলল, হে শো‘আয়েব! তোমার ছালাত কি তোমাকে এই শিক্ষা দেয় যে, আমরা ঐসবের পূজা ছেড়ে দেই, আমাদের বাপ-দাদারা যাদের পূজা করত? অথবা আমাদের ধন-সম্পদে আমরা ইচ্ছামত যা কিছু করে থাকি, তা পরিত্যাগ করি?...’ (হূদ ১১/৮৭)। উপরোক্ত আয়াতগুলিতে নিম্নোক্ত কারণগুলি প্রতিভাত হয়। যেমন (১) আল্লাহর হক ও বান্দার হক নষ্ট করা : তারা আল্লাহকে ছেড়ে বিভিনণ সৃষ্টিপূজায় লিপ্ত হয়েছিল এবং বৈষয়িক বিষয়গুলিকে আল্লাহর আনুগত্য হ’তে মুক্ত ভেবেছিল। পৃথিবীর ঘোষিত একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপালের অধিকাংশ মানুষ আল্লাহকে ছেড়ে মূর্তিপূজায় লিপ্ত থাকে। তাদের পুরোহিতরা বলেছে দেব-দেবীরা নাখোশ হওয়াতেই ভূমিকম্প হয়েছে। যারা নিয়মিত দেব-দেবীর পূজা দিত, তারা নাকি ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছে। হাতে গড়া মূর্তি কিছুই করার ক্ষমতা রাখেনা। তবুও আধুনিক যুগের জ্ঞানী মানুষেরা এসবেরই পূজা করে ও তাদেরকে মহা শক্তিধর মনে করে। অথচ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহকে ভুলে যায়। পাশাপাশি আমরা যারা মুসলিম, তারা মৃতদের কবরপূজায় লিপ্ত। আরেকদল আল্লাহর বিধান ছেড়ে মানুষের মনগড়া বিধান পূজায় লিপ্ত। ফলে উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছ থেকে আল্লাহর দাসত্ব নির্বাসিত। (২) পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা : আল্লাহর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে আমরা কিন্তু সেটাই করছি। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের ৭৯ শতাংশ মেধাশক্তি ব্যয়িত হচ্ছে মারণাস্ত্র তৈরীতে। সেই সাথে চলছে সর্বত্র নেতৃত্ব ও ক্ষমতার লড়াই। চলছে যুদ্ধ ও ধ্বংসের মাধ্যমে পৃথিবীকে লুটেপুটে খাওয়ার প্রতিযোগিতা। সমৃদ্ধ দেশগুলির অগণিত শিল্পকারখানার অবিরতভাবে ধোঁয়া উদ্গীরণের ফলে বায়ুমন্ডল ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। ফলে পৃথিবীর ৯০ শতাংশ পানির উৎস দক্ষিণ গোলার্ধ্বের ২.৬ কি.মি. পুরু বরফাচ্ছাদিত এ্যানটার্কটিকা মহাদেশ এখন পরিমাণের চাইতে বেশী গলতে শুরু করেছে। একইভাবে ‘ওয়াটার টাওয়ার অফ এশিয়া’ বলে খ্যাত উত্তর মেরুর বাইরে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বরফের স্তূপ রয়েছে হিমালয় পর্বতমালায়। যা এশিয়া মহাদেশের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, মেকং, হোয়াংহো সহ ৭টি বড় বড় নদীকে পানির যোগান দেয়। চীন, মিয়ানমার ও ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ যে পানির উপরে নির্ভরশীল। উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। যা আশপাশের দেশগুলিকে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।





মানব সৃষ্ট এসব বিপর্যয়ের ফলেই নেমে আসছে একের পর এক আল্লাহর গযব। বর্তমান ভূমিকম্প মহান আল্লাহর তেমনই একটি মহা পরীক্ষা। যাতে বান্দা আল্লাহর দাসত্বে ফিরে আসে। এই ভূমিকম্প নেপালে হ’লেও এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববাসী সকলের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসবেন কি? আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অনুগত হওয়ার তাওফীক দান করুন-আমীন!

সূত্রঃ আত-তাহরীক

Post a Comment

Thank you for your Comment

Previous Post Next Post

Contact Form