মুসলমান হতে হলে প্রথম শর্তই হলো
ঈমান আনা। কিন্তু অনেক সময়
আমাদের খেয়ালে বা বেখেয়ালে নিজেদের
কিছু ভুলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই মুসলামন হিসেবে অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে আমাদের
জেনে রাখা উচিত কোন কাজগুলো করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। ঐ সকল ইসলাম বিধ্বংসী কাজ
গুলো নিন্মে সংক্ষিপ্ত ভাবে কিঞ্চিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহ উল্লেখ করা হলো-
ইসলাম ও ঈমান বিধ্বংশী কাজগুলো
নিন্মরূপঃ
প্রথমতঃ
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا
“নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শিরক করাকে
ক্ষমা করেন না।উহা ব্যতিরেকে উহার নিন্ম পর্যায়ের পাপ সবই তিনি যাকে ইচছা ক্ষমা
করেন”। [নিসা : ১১৬]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُواْ اللّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
“তারা
কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে
বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর
এবাদত কর, যিনি আমার পালন
কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার
বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।”। [সূরা মায়েদাহ্ : ৭২]
দ্বিতীয়ঃ
নিজের ও আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতা
সাব্যস্ত করে তাদের উপরেই ভরসা রাখা। এই ধরণের ব্যক্তি সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে
গণ্য।
তৃতীয়ঃ
মুশরিককে মুশরিক বা কাফেরকে কাফের না
বলা বা তাদের কুফরীতে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদের ধর্মকে সঠিক ভাবা।
চতুর্থঃ
এই বিশ্বাস করা যে অন্যের আদর্শ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের চাইতে অধিক পূর্ণাঙ্গ। কিংবা এই
বিশ্বাস করা যে, অন্যের বিধান নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধান অপেক্ষা অধিক উত্তম। (যেমন কেউ কেউ
তাগুতের বিধানকে নবীর বিধানের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিযে থাকে) সে ব্যক্তি কাফের বলে
গণ্য হবে।
পঞ্চমঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আনিত কোন বস্তুকে ঘৃণার চোখে দেখা। এমতাবস্থায় সে কাফের বলে গণ্য হবে
যদিও সে ঐ বস্তুর উপর বাহ্যিক ভাবে আমল করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
ﺫﻟﻚَ ﺑِﺄﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺮِﻫُﻮﺍ ﻣﺎَ ﺃﻧْﺰَﻝ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﺄﺣْﺒَﻂَ ﺃﻋْﻤﺎَﻟَﻬُﻢْ
“ইহা এজন্যই যে, তারা আল্লাহর নাজিলকৃত
বিষয়কে ঘৃণা করেছে সুতরাং আল্লাহ তাদের আমল গুলোকে পণ্ড করে দিয়েছেন”। [সূরা
মুহাম্মাদ : ৯]
ষষ্ঠঃ
দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে বা তার
পুরস্কার কিংবা শাস্তিকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
“আপনি বলুন (হে রাসূল) তোমরা কি
আল্লাহর সাথে, স্বীয় আয়াত সমূহের সাথে
এবং রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? কোন প্রকার ওজর-আপত্তির অবতারণা কর না। তোমরা ঈমান আনায়নের পর
আবার কুফরী করেছ”। [সূরা তাওবাহ্ : ৬৫-৬৬]
সপ্তমঃ
যাদু-টোনা করা: যাদুর অন্যতম প্রকার
হল তন্ত্র-মন্ত্রেরসাহায্যে দুজন মানুষের বন্ধন তৈরী করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক
ছিন্ন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি যাদু করবে বা তাতে রাজি হবে সে কাফের বলে বিবেচিত
হবে। আল্লাহ তাআলার বলেনঃ
“ঐ দুজন (হারূত- মারুত ফেরেস্তা)
কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্থা না বলতেন-নিশ্চয় আমরা
(তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না”।
[সূরা বাকারা : ১০২]
অষ্টমঃ
মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরূদ্ধে
সাহায্য সহযোগিতা করা। আল্লাহ তাআলার বাণী:
“তোমাদের মধ্য হতে যে ওদের (অর্থাৎ
বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই দলভূক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ
যালেমদেরকে হেদায়াত দান করেন না”। [সূরা মায়েদা: ৫১]
নবমঃ
এ বিশ্বাস করা যে, কারও জন্য মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীয়তের বাইরে থাকার অবকাশ রয়েছে। যেমন (এক
শ্রেণীর ভণ্ড সূফীর ধারণা অনুপাতে) অবকাশ ছিল খিযির (আ:)এর জন্য মূসার (আ:) শরীয়ত
হতে বাইরে থাকার। এ বিশ্বাসেও সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্যধর্ম
অন্বেষণ করবে তার থেকে তা গ্রহন করা হবে না। এবং সে পরকালে ক্ষতি গ্রস্থদের
দলভূক্ত হবে”। [সূরা আলে ইমরান: ৮৫]
দশমঃ
সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর দ্বীন হতে
বিমুখ থাকা। সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জন না করা, তদানুযায়ী আমল না করা, এই ধরণের মন-মানষিকতার ব্যক্তিও কাফের বলে পরিগণিত হবে। আল্লাহ
তাআলা বলেনঃ
“ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কে বেশী যালিম
(অত্যাচারী) হতে পারে, যাকে উপদেশ দেওযা হয়েছে
স্বীয় প্রতিপালকের আয়াত সমূহ দ্বারা অত:পর সে উহা হতে বিমুখ হয়েছে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের থেকে
প্রতিশোধ গ্রহণ কারী”। [সূরা সাজদাহ্ : ২২]
কোন লোক এ সকল বিষয়ে লিপ্ত হলে সে
কাফের বলে বিবেচিত হবে চাই সে মজা করার জন্য এ সকল কাজ করুক বা গুরুত্ব সহকারে করুক, সেচ্ছায় করুক বা ভয়ে করুক।
অবশ্য কাউকে যদি বাধ্য করা হয় তবে তার ব্যাপার আলাদ। এ সমস্ত ইসলাম বিধ্বংশ বিষয়
অত্যন্ত মারাত্মক। তার পরও তা ব্যাপকভাবে এসব সংগঠিত হয়ে থাকে। সুতরাং মুসলিম
ব্যক্তির উপর অপরিহার্য কর্তব্য হল এ সকল বিষয় থেকে সতর্ক থাকা।
অনুরূপভাবে যদি কেউ বিশ্বাস করে যে
ইসলামের বিধি-বিধান এই বিংশ শতাব্দীতে বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। অথবা এই বিশ্বাস করে
যে, ইহাই মূলত: মুসলিমদের পশ্চাদ
মুখী হওয়ার কারণ। অথবা উহাকে সে স্বীয় প্রতি পালকের সাথে সর্ম্পর্কত করার মধ্যেই
সীমিত রাখে, জীবনের অন্যান্য বিষয়ের কোন
কর্তৃত্ব নেই বলে ধারণা
করে।অর্থাৎ বলে যে শরীয়ত ব্যক্তিগত
জিনিস, সমাজ, রাষ্ট বা জীবনের অন্য
ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রয়োজন নাই তাহলে সেও চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশকারী আমল
সম্দপনকারী কাফেরদের দলভূক্ত হবে।
Tags
Shariah