ভবিষ্যত গণনা সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি?

প্রথমতঃ ভাগ্য গণনা বা ভবিষ্যত গণনাকরা শিরক ও কুফরীর সাথে জড়িত থাকার কারণে ইসলামে এটি বর্জনীয় এবং কঠোর দৃষ্টভঙ্গি গ্রহন করা হয়েছে ।

এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূলের মতামত কি ? এবং কেন এটি শিরক বা কুফরী ?
অসুন সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক

গণকের নিকট গমন করা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল বলছেন,

হাফসা রাঃ থেকে সাফিয়া বর্ণনা করেন যেরাসূল সাঃ বলেছেনযদি কেউ কোন গণকগাইবী বিষয়ের সংবাদদাতা বা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন করে তাকে কিছু জিজ্ঞাস করে তবে ৪০ দিবস তার সালাত কবুল হবে না । (মুসলিম খন্ড ৪হাদীস নং ৫৫৪০)

অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায় যে,

 মু আবিয়া রাঃ বলেনহে আল্লাহর রাসূল সাঃ । নিশ্চয় আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা গণকের নিকটে যায় । রাসূল সাঃ বললেন তাদের কাছে যাবে না । (মুসলিম শরিফ ৫৫৩২)

[ এখানে একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো এই যেযে কারো গণকের নিকট যাওয়া যাবে না আর কেউ যদি ভুলবশত যায় তবে তার একথা মনে করা ঠিক হবে না যে আগামী ৪০ দিন আর সালাত আদায় করা লাগবে না। বরং সালাত নিয়মিত আদায় করতে হবে । কারণ হলো সালাত কবুল হবে না বলতে তিনি এই সালাতের জন্য কোন সোওয়াব পাবেন না কিন্তু না আদায় করলে কাযা হবার জন্য গুনাহগার হবেন ]

গনকের প্রতি বিশ্বাস হলো শিরক এবং কুফরী, কেন ?

আল্লাহ তাআলা হলেন সর্বশক্তিমান তিনি একমাত্র সব কিছু করার ক্ষমতা রাখেন , তিনিই জানেন ভবিষ্যতে কি হবে আর কি হবে না । আর তিনি ছাড়া কেউ তা জানেননা । 

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

সমস্ত গায়েবের চাবি কাঠি তার কাছে তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানেন না ।

وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلاَ حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الأَرْضِ وَلاَ رَطْبٍ وَلاَ يَابِسٍ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ


তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছেতিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে নাকিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় নাকিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।  (সুরা আনআমআয়াত:৫৯)

আল্লাহ তাআলা আরো বলনে,

قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ

আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখেন না আল্লাহ ছাড়া । (সুরাঃ নামাল আয়াতঃ  ৬৫)

সুতরাং এ কথা প্রমানিত যে গণক গন কিছুই জানে না বরং তার মানুষকে ধোকা দেয়  কারণ তারা অদৃশ্য বিষয়ে জানে না । তারা কেন আল্লাহর রাসুল সাঃ নিজেই জানতেন না । 

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَاْ إِلاَّ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

বলুনআল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা নেই । আমি যদি অদৃশ্যের খবর রাখতাম তহলে নিজের জন্য অনেক বেশি ফায়দা হাসিল করতে পারতাম । আর কোন প্রকার অকল্যানই আমাকে স্পর্শ করতে পারত না । (সুরাঃ আরাফ আয়াতঃ ১৮৮)

যেখানে আল্লাহর রাসূল সাঃ কে আল্লাহ তাআলা এই জ্ঞান দেন নি সেখানে এই সব সাধারণ মানুষদের কি জ্ঞান আছে যে তারা আপনার ভবিষ্যত কিংবা অতিত বলে দিবে ?

এখানে মুলত গণক দের গণনা বিশ্বাস করার মাধ্যমে শিরক করা হচ্ছে । গায়েব বা অতিত ভবিষ্যত এসব কিছু একমাত্র আল্লাহই জানেন কিন্তু যখন আপনি ভাবলেন গনক মনে হয় জানে তখনিই আল্লাহর সাথে সমকক্ষ করে শিরক করলেন ।
এই বিশ্বাস তাওহীদ কে ভেঙ্গে দেয় , আল্লাহর ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বলে ।

আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেছেনযদি কেউ কোন গণকের বা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন করে তার কথা বিশ্বাস করে তবে সে মুহাম্মদের সাঃ উপর অবতীর্ণ দ্বীনের উপর কুফুরী করল । (আবু দাউদ ৩৮৯৫)

শেষ কথা এই যে ভবিষ্যত বা অতিত যে কোন ব্যাপারে কোন গনক , কোন জ্যোতিষী , রাশিবিদ , পীরফকীরসাধুযে কোন কারো কাছে যাওয়া যাবে না । কারণ তারা কিছুই জানেনা । তারা মুলত ধোকা দেয় । এছাড়াও গণকদের লেখা বই বা পত্র পত্রিকায় বা গবেষণা পত্র ইত্যাদি পড়া বা মিলিয়ে দেখা যাবে না । এগুলোও কূফুরীর আন্তর্ভুক্ত ।


তবে কোন সম্ভব্য কিছু যেমনঃ আবহাওয়া কিংবা নামাজ রোজার সময় সূচি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সম্ভব্য সময়ের পূর্বে ইনশাআল্লাহ লিখতে হবে কারণ এটাও মানুষ সঠিক ভাবে নির্ধারণ করতে পারে না ।

Post a Comment

Thank you for your Comment

Previous Post Next Post

Contact Form