কারা সঠিক পধ প্রাপ্ত ? অধিকাংশ লোক নাকি কম সংখ্যক লোক ?

আজ আমরা একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, এটি আমাদের সমাজে প্রচলিত এবং বিতর্ক সৃষ্টি কারি একটি বিষয় তা হলো কারা সঠিক পথ প্রাপ্ত অধিকাংশরা নাকি কমসংখ্যকরা এবং কোন কাজের ব্যাপারে অধিকাংশ লোক কেই কি সব সময় প্রধান্য দিতে হবে ? বা অধিকাংশের মতামতই কি সব সময় সঠিক ?
আর আমাদের অনেকেই ধারণা করে থাকে যে, এই কাজটি অধিকাংশ লোক করছে তাই হতে পারে এটি সঠিক, আবার দ্বীনের এই বিষয় টি অধিকাংশ মানুষ মেনে চলে বা অনুসরণ করে এজন্যই এটি হয়ত সঠিক । অনেকই বলে থাকে এতগুলো লোক কি একসাথে ভুল পথে থাকতে পারে?
সহজ কথা হলো দ্বীনের কাজ গুলো কে লোকদের উপস্থিতি দেখে পরিমাপ করা যাবে না বরং আল কোরাআন এবং আল হাদিস দ্বারা পরিমাপ করতে হবে । এমটা হতে পারে যে বেশি সংখ্যক লোক একটি সঠিক কাজ কে পালন করছে তাই বলে কিন্তু সব এই সুত্র দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না ।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِي الأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللّهِ إِن يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَخْرُصُونَ
হে নবী আপনি যদি অধিকাংশ লোকের কথা মানেন , তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করে দিবে। কেননা তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধারণার অনুকরণ কে এবং অনুমান করে কথা বলে । নিশ্চয়ই আপনার প্রভু সবচাইতে বেশি জানেন, কারা আল্লাহর পথ হতে গোমরাহ হয়েছে এবং তিনিই অধিক জানেন কারা হিদায়াতপ্রাপ্ত বা সঠিক পথে আছে । (সুরাঃ আল-আনআম আয়াতঃ ১১৬-১১৭)

আবার আল্লাহ তাআলা অপর আয়াতে বলেন,

وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ
হে নবী আপনি যতই আকাঙ্খা করেন না কেন অধিকাংশ লোক ঈমান অনবে না । (সুরাঃ ইউসুফ আয়াতঃ ১০৩)

একই সুরা ১০৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللّهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ
অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেও তারা মুশরিক । (সুরাঃ ইউসুফ আয়াতঃ ১০৬)

এই তিনটি আয়াতের প্রথমটি এটি প্রমাণ করে যে, অনেক সময় অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করা ঠিক নয় ।

অনেকেই ভাবেন, অমুক পীরের দরবারে ১০ লক্ষ লোক এক সাথে উপস্থিত হয় আর এত লোক কি অজ্ঞ ? যে তারা ভুল পধে আছে ?
অথবা অমুক দলে মানুষ দলে দলে যোগ দিচ্ছে অমুক দলে থেকে মানুষ দলে দলে দ্বীন প্রচার করছে এই দল টাই ভালো আর অমুক দলে মাত্র কয়েক জন তাদের টা তো মানুষের কাছে তেমন গ্রহনযোগ্যতা পায়নি তাই ওটা ঠিক নয় ।
আমরা লোক সমগম দেখে মিথ্যার প্রতি একমত হতে পারি না । অথবা দলে দলে মানুষের প্রবেশ দেখে আমরা সঠিক বলে ধরে নেই ।

কিন্তু আপনার আমার এ চিন্তার জবাবে আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ

وَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا عَذَابًا دُونَ ذَلِكَ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
গোনাহগারদের জন্যে এছাড়া আরও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। সুরাঃ তুর আয়াতঃ ৪৭
(সুরাঃ আরাফ আয়াতঃ ১৩১, সুরাঃ লুকমান আয়াতঃ ২৫ এছাড়াও আরো বেশ কিছু সুরায় এই আয়াতটি আছে )

 وَلَقَدْ صَرَّفْنَا لِلنَّاسِ فِي هَـذَا الْقُرْآنِ مِن كُلِّ مَثَلٍ فَأَبَى أَكْثَرُ النَّاسِ إِلاَّ كُفُورًا
আমি আলকুরাআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সবরকম বিষয় বস্তু বুঝিয়েছি । কিন্তু অধিকাংশ লোকই অস্বীকার না কারে থাকেনি । (সুরাঃ বানী ইসরাঈল আয়াতঃ ৮৯)

এ সব আয়াত দ্বারা এটা বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহ তার দ্বীনের জ্ঞান অল্প সংখ্যক লোকদের দেন । আর অল্পসংখ্যই দ্বীনকে মেনে নিবে বা নিয়েছে । এজন্যই সংখ্যাধিক্য দেখে কোন পথ কে সঠিক মনে করা যাবে না ।
আর আল্লাহর এই আয়াতের সত্যতা প্রমাণ করতেই বুঝি প্রতি ইলেকশনে আমাদের দেশে মানুষ জন নারী দের ভোট দেয় এটা জানার পরেও যে নারি নেতৃত্য ইসলামে হারাম ।

প্রথম থেকে দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন যে, অধিকাংশ লোকই ঈমান আনবে না ।
সত্যই একবার ভাবুন তো পৃথিবীর শতকরা কত ভাগ লোক মুসলিম । আবার ভাবুন তো মুসলিমদের মাঝে শতকরা কত জন লোক সঠিক ভাবে আল্লাহ হুকুম মেনে চলে ?

আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَمْ يَقُولُونَ بِهِ جِنَّةٌ بَلْ جَاءهُم بِالْحَقِّ وَأَكْثَرُهُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ
বরং তিনি তাদের নিকট সত্য নিয়ে আগমন করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ লোক সত্য কে অপছন্দ করে । ( সুরাঃ মুমিনুন আয়াতঃ ৭০)

আবার অনেকই ভাবেন এই বিষয় টি আমার বাপ দাদা অর্থাৎ আমার পূর্বপুরুষ সবাই করেছে তাই আমিও করি কিংবা এগুলো কিভাবে মিথ্যা হয় ?
এভাবে বাবা কেন যে কাউকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করা যাবে না শুধু মাত্র আল্লাহর রাসূল কে ব্যতিত ।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলছেন,

وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الْأَوَّلِينَ
তাদের পূর্বে অগ্রবর্তীদের অধিকাংশ পধভ্রষ্ট ছিল । ( সুরাঃ আস সফফাত আয়াতঃ ৭১)
সুতরাং বাপ দাদার দোহাই দিয়ে কোন কাজ করা যাবে না বরং তা কোরাআন এবং হাদিসের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে ।
কিন্তু কথা হলো কেন অধিকাংশ লোক সঠিক পথ প্রাপ্ত হয় না ?

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলা কয়েকটি কারণ বলেন,
وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلاَّ ظَنًّا إَنَّ الظَّنَّ لاَ يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا إِنَّ اللّهَ عَلَيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ
আর তাদের অধিকাংশি শুধু আন্দাজ-অনুমানের উপর চলে অথচ আন্দাজ-অনুমান সত্যের বেলায় কোন কাজে আসে না । (সুরাঃ ইউনুস আয়াতঃ৩৬)
এছাড়া তিনি বলেন,

তোমাদের অধিকাংশই ফাসিক (সুরাঃ আল মায়িদাহ আয়াতঃ ৫৯)
কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই মূর্খ । (সুরাঃ আন আনআম আয়াতঃ ১১১)

أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ هَذَا ذِكْرُ مَن مَّعِيَ وَذِكْرُ مَن قَبْلِي بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ الْحَقَّ فَهُم مُّعْرِضُونَ
বরং তাদের অধিকাংশ লোকই সত্যকে জানে না, অতএব তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় (সুরাঃ আম্বিয়া আয়াতঃ ২৪)
তাছাড়া মানুষ শয়তানের দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয় আর এজন্যই ঈমানদারের সংখ্যা কম থাকে ।

আল্লহ তাআলার মতে অল্প সংখ্যক লোকই নাযাত প্রাপ্ত । আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন আল কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করেছেন যে,
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لاَ تَعْبُدُونَ إِلاَّ اللّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْناً وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلاَّ قَلِيلاً مِّنكُمْ وَأَنتُم مِّعْرِضُونَ
তোমরা সালাত প্রতিষ্টা করেব এবং যাকাত প্রদান করবে । অতঃপর অল্প সংখ্যক লোক ব্যতিত তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে । তোমরাই অগ্রাহ্যকারী । (সুরাঃ বাকারা আয়াতঃ ৮৩)
অতএব অল্পসংখ্যক ব্যাতিত তারা ঈমান আনবে না (সুরাঃ নিসা আয়াতঃ ৪৬)
আমার বান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যক লোকেই কৃতজ্ঞ । (সুরাঃ সাবা আয়াতঃ ১৩)

জাবির বিন সামুরাহ (রাঃ) নবী সাঃ থেকে বর্ণণা করেছেন, নবী সাঃ বলেছেন, মুসলিমদের থেকে অল্প সংখ্যক লোকি এই দ্বীনের উপর সর্বদা প্রতিষ্ঠিত থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবে । (মুসলিম ২য় খন্ড ১৪৩ পৃঃ)


আলোচ্য সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্যমে এ কথাকে সবার মাঝে পৌছাতে চাইছি যে, এমটা ভাবা সঠিক নয় যে অধিকাংশ লোক সঠিক প্রাপ্ত এবং তাদের মত পথ পদ্ধতি কে মেনে নিলে সঠিক পথ পাওয়া যাবে বরং অল্প সংখ্যক লোকের মাঝেও সঠিক জ্ঞান বা পথ, মত, নীতি, যাই বলেন না কেন তা থাকতে পারে । আবার এমনটা ভাবা ঠিক হবে না যে, অধিকাংশরা সব সময় ভূল পথ প্রাপ্ত হয় বরং সঠিক পথ প্রাপ্ত হতে পারে । তবে অধিকাংশের দোহাই দিয়ে মুশরিকদের নীতী, বিদাআত পালন করা যাবে না । এজন্য যে কোন বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত নিতে প্রথমে সংখ্যাধিক্য না দেখে আল কুরআন এবং আল হাদিস কে প্রধান্য দিতে হবে । 


Post a Comment

Thank you for your Comment

Previous Post Next Post

Contact Form