আসুন দেখে নিই গাজরের যত গুণ!!!

সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শীতকালীন শাক সবজির মধ্যে অন্যতম পুষ্টিকর সবজি গাজর।শীতের সময় অন্যান্য সবজির সঙ্গে গাজর পাওয়া যায় প্রচুর। গাজরের প্রায় ১০০টি ভিন্ন ধরনের প্রজাতি রয়েছে। গাজরে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। যেমন- থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি৬, ফলেইট এবং ম্যাংগানিজ যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক জরুরী। এছাড়াও গাজরে আরও আছে ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে ও পটাশিয়াম। অর্থাৎ আমাদের দেহকে সুস্থ সবল রাখতে যে সব ভিটামিন ও খনিজ উপাদান প্রয়োজন তার সবই আছে গাজরে। গাজরকে বলা হয় সর্বগুণে গুণান্বিত সবজি। আসুন দেখে নিই গাজরের স্বাস্থ্য উপকারিতা ।
দাঁতের সুরক্ষায় গাজর
দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় গাজরের গুরুত্ব অনেক বেশি। গাজর খেলে দাঁত পরিষ্কার হয়। দাঁতে জমে থাকা প্লাক দূর হয়। ডাক্তাররা বলেন গাজর খাওয়ার সময় আমাদের মুখে ‘সিলভা’ নামক একটি যৌগের নিঃসরণ ঘটে। সিলভা মুখে অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখে যা দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। প্রতিদিন একটি করে গাজর খেলে মাড়ি ও দাঁতের সমস্যা দূর করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
গবেষকরা আবিষ্কার করেন গাজর ফুসফুসের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ফ্যালকারিওনল ও ফ্যালকারিনডিওল দুটি ক্যান্সার প্রতিরোধী যৌগ, যারা দেহে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি করতে বাধা প্রদান করে। গাজরে এই দুটি যৌগ প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদন হয়। গাজর খেলে দেহ ভেতর ত্থেকে নিজেকে ক্যান্সার বিরোধী করে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। এছাড়াও গাজর চামড়ার ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে। গবেষকদের মতে যারা নিয়মিত গাজর খান তাদের প্রায় ৭০% মানুষ চামড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান।
চেহারার বয়সের ছাপ দূর করে
গাজরে বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন ত্বকের ক্ষতি পূরণ করতে সাহায্য করে। বিটা ক্যারোটিন খুব ভালো একটি অ্যান্টি এইজিং এর উপাদান যা মুখের বয়সজনিত দাগ ও রিঙ্কেল দূর করে। গাজর খেলে মুখে বয়সের ছাপ ধীরগতিতে আসে। গবেষকরা বলেন সপ্তাহে ৬টি গাজর চেহারার বয়সের ছাপ দূর করে ।
চোখের সুরক্ষায় গাজর
গাজর ভিটামিন এ তে সমৃদ্ধ। ভিটামিন এ চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়াও গাজরের বিটা ক্যারোটিন লিভারে ভিটামিন এ তে পরিনত হয় যা সরাসরি রেটিনাতে পৌছায়। তারপর এই ভিটামিন এ রেটিনা থেকে রডোস্পিন এ যায়। রডোস্পিন একটি হালকা বেগুনি রঙের পিগমেনট যা রাতের বেলার দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। সুতরাং গাজর রাতকানা রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে।
লিভার সুস্থ রাখে
গাজর একটি ডেটক্স খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ডেটক্স খাদ্য সমূহ লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গাজর লিভারকে পরিস্কার করে। লিভারঘটিত সকল ধরনের রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। গাজর লিভারে জমে থাকা মেদ দূর করতে সব থেকে কার্যকরী একটি ওষুধ।
রক্ত পরিষ্কার করে
গাজর রক্ত পরিষ্কার করে। গাজর খেলে ত্বক কোমল ও সুন্দর হয়। মহিলারা ত্বক ফর্সা করতে এবং মুখের সৌন্দর্য বাড়াতে বেশি বেশি গাজর খেতে পারেন। যাদের পেটে গ্যাস হয়, শরীরে জ্বালাপোড়া করে তারা গাজর খেয়ে উপকার পাবেন।
গাজরের বহু গুণ। যেমন- ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, সহজে হজম হয়। রক্তপিত্ত, অর্শ, পেটের অসুখ, কফ ও বায়ুরোগ ভালো হয়। গাজর কৃমিনাশক। এতে হৃদরোগ ভালো হয়। হৃদরোগীরা কাঁচা চিবিয়ে খেলে বেশি উপকার পাবে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’। এই ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দৈহিক শক্তি হ্রাস পায়। দেহের ত্বক খসখসে হয়ে যায়। রাতকানা রোগ হয়। মাড়ির রোগ হয়। হাড় নরম হয়ে যায়। তাই গাজর খেলে ওই সব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
যারা অর্শ, যক্ষ্মা ও পিত্ত রোগে ভুগছেন, তারা নিয়মিত গাজরের সালাদ খেলে উপকার হবে। শিশুদের গাজর খাওয়ালে পুষ্টি পায়, বাড়ন দ্রুত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আছে তারা গাজর খেলে উপকার পাবে। গ্যাস্ট্রিক-আলসার রোগীরা গাজর খেলে উপকার হয়।
একটা গাজরে আপনার দৈনিক ভিটামিন এ চাহিদার ২০০ শতাংশই পেয়ে যাবেন আপনি।ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিনের চমৎকার উৎস হলো গাজর। গাজরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন লাইকোপিন ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট নানা ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। বিটা ক্যারোটিন চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। গাজরের পুষ্টিমান ও উপকার পুরোপুরি পেতে কাঁচা বা আধসেদ্ধ অবস্থায় খান। সেদ্ধ করে বা রান্না করে পানি ফেলে দেবেন না। গাজরের কচিপাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় এবং এই গাজর শাক গাজরের চেয়ে তিনগুণ বেশি উপকারী।

Post a Comment

Thank you for your Comment

Previous Post Next Post

Contact Form