সম্পদ বৃদ্ধির বৈধ উপায় সমূহ

bangla islamic blog, ialamer alo, hadith, quran, islam, bangl, articale, dua, salat, shariah, islamic song, jihad, question, health, help

তাক্বওয়া অবলম্বন করা

তাক্কওয়া অবলম্বন করা বা হালাল হারাম থেকে বেচে থাকা, এবং আল্লাহর শাস্তির ভয়ে যাবতীয় গুনাহের কাজ বর্জন করা এবং তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা । 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সুরা তালাকের ২-৩ তম আয়াতে বলেন-

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।(২) এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। (৩)

আল্লাহ তাআলা সুরা আল আরাফ এর ৯৬ তম আয়াতে বলেন-

“আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে”।

সুতরাং এ কথা পরিষ্কার যে, যেকেউ তাক্কওয়া বা খোদাভীতি বা পরহেজগারিতা অবলম্বন করলে আল্লাহ তার জন্য উত্তম রিযিকের ব্যবস্থার করবেন এবং নেয়ামত সমূঞ উন্মুক্ত করে দিবেন । আল্লাহর নেয়ামত সমূহ উন্মুক্ত হলে সম্পদ বৃদ্ধিতে আর বাধা কোথায়?

ক্ষমা চাওয়া এবং তওবা করা

ক্ষমা চাওয়া এবং তওবা করা বলতে আল্লাহর কাছে নিজের অপারগতা প্রকাশ করা, তার সাহায্য চাওয়া এবং কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়া ।

আল্লাহ তাআলা সুরা নূহ এর ১০ থেকে ১২ তম আয়াতে বলেন,

অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (১০) তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন(১১) তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।(১২)
এবং এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন “তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহ তা'আলার শ্রেষ্টত্ব আশা করছ না”।(১৩)

আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইলে বা তওবা করছে আল্লাহ তাআলা প্রচুর দিবেন বলেছেন সুরা হূদ এর ৫২ তম আয়াতে –

আর হে আমার কওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না”

এছাড়াও অত্র সুরার ৩য় আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি”।

সুতরাং ক্ষমা প্রার্থনা করা বা পুনরায় গুনাহের দিকে ধাবিত না হবার ঘোষনা দিয়ে তওবা কারিকে আল্লাহ উংকৃষ্ট জীবনোপকরন দান করবেন । তা কতই না কল্যানকর সম্পদ ।

তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা

সম্পূর্ণ ভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করা বা তার মুখোপেক্ষি থাকা বা নির্ভর করাই হলো তাওয়াক্কুল । আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন –

তোমরা যদি আল্লাহর উপর যথাযথ ভরসা কর তাহ’লে তোমাদের জীবিকা দেওয়া হবে ঐভাবে যেভাবে পাখি রিযক প্রাপ্ত হয়। পাখি সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বের হয় এবং পেট পূরণ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে” (তিরমিযী, হা/২৩৪৪ হাদীছ ছহীহ; মুসনাদে আহমদ, হা/২০৫, ৩৭২, ৩৭৫)

আল্লাহ তাআলা বলেন-
 وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِيْ لاَ يَمُوْتُ وَسَبِّحْ بِحَمْدِهِ وَكَفَى بِهِ بِذُنُوْبِ عِبَادِهِ خَبِيْراً-
“তুমি নির্ভর কর তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত” (ফুরক্বান - ৫৮)

আল্লাহ তাআলা অপর এক আয়াতে বলেন,
 وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوْاْ مَا آتَاهُمُ اللّهُ وَرَسُوْلُهُ وَقَالُواْ حَسْبُنَا اللّهُ سَيُؤْتِيْنَا اللّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَرَسُوْلُهُ إِنَّا إِلَى اللّهِ رَاغِبُوْنَ-
কতই না ভাল হ’ত, যদি তারা সন্তুষ্ট হ’ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্যে যথেষ্ট। আল্লাহ আমাদের দিবেন নিজ করুণায় এবং তাঁর রাসূলও। আমরা শুধু আল্লাহকেই কামনা করি” (তওবা - ৫৯)

সুতরাং আল্লাহর উপর ভরসা আমাদের রিযিকের চিন্তা থেকে কিছুটা হলেও লাঘব করে দিবে এবং আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন তিনি তার করুণা দিবেন ।

আল্লাহর ইবাদত করা এবং শুকরিয়া জ্ঞাপন করা

আল্লাহর ইবাদত আমাদের ধন বৃদ্ধি করে দিবেন এবং দারিদ্র্যতা মোচন করে দিবেন । কেননা যত সম্পদই আর্জন করা হোক না কেন যতক্ষন না অভাব পুরন হয় ততক্ষন আমাদের করারই মনে হয় না আমরা যথেষ্ট সম্পদের মালিক আর আমরা সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতেই থাকি । আর আল্লাহর ইবাদত আমাদের এহেন অভাব কে মোচন করে দিবে-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য আত্মনিয়োগ কর। আমি তোমার অন্তরকে ধনে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য মোচন করে দেব।  আর যদি তুমি তা  না কর তাহ’লে আমি তোমার অন্তরকে ব্যস্ততায় পূর্ণ করব, তোমার অভাবকে মোচন করব না’ (ইবনু মাজাহ, ‘যুহ্দ’ অধ্যায়, হা/৪১০৭)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
 وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ-
“যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হ’লে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিব, আর অকৃতজ্ঞ হ’লে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর” (ইবরাহীম - ৭)

সুতরাং আল্লার প্রতি কৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ আমাদের সম্পদকে বৃদ্ধি করে দিবেন


কর্যে হাসানা প্রদান করা

কর্যে হাসানা বা বিনা সুদে টাকা ধার প্রদান কারিকে আল্লাহ অধিক দিবেন বলেছেন যেমন-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
 إِنَّ الْمُصَّدِّقِيْنَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوا اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيْمٌ-
দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ বেশী এবং তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার” (হাদীদ - ১৮)

আল্লাহ আরো বলেন,
 إِنْ تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ-
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্যে এটা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ কৃতজ্ঞ সহনশীল” (তাগাবুন - ১৭)

অন্যত্র তিনি বলেন,
 مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللّهَ قَرْضاً حَسَناً فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافاً كَثِيْرَةً وَاللّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ-
“কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করে? অনন্তর তিনি তাকে দ্বিগুণ বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহই সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তারই দিকে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে” (বাক্বারাহ - ২৪৫)

আল্লাহ বলেন,
 مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَلَهُ أَجْرٌ كَرِيْمٌ-
কে আছে যে আল্লাহকে দিবে উত্তম ঋণ? তাহ’লে তিনি বহুগুণে একে তার জন্য বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার” (হাদীদ - ১১)।


আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা এবং দান করা

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ তাআলা তার সম্পদ বাড়িয়ে দিবেন যেমন-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ أَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّئَةُ حَبَّةٍ وَاللّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ-
“যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন- একটি শস্য বীজ, তা হ’তে উৎপন্ন হ’ল সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে উৎপন্ন হ’ল শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন বর্ধিত করে দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হচ্ছেন বিপুলদাতা, মহাজ্ঞানী” (বাক্বারাহ - ২৬১)

এক কথায় চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে সম্পদ যখন কিনা আল্লাহর পথে ব্যায় করা হয় ।
রাসূল সাঃ বলেন-
“আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘বান্দাগণ যখন প্রভাত করে তখন দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তার মধ্যে একজন বলেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি তোমার পথে ব্যয় করে তাকে উত্তম প্রতিদান দাও। অপরজন বলেন, কৃপণের মাল ধ্বংস কর” (ছহীহ বুখারী, ১ম খন্ড ‘ভারত : মাকতাবুল ইত্তিহাদ, তা.বি.’ পৃঃ ৪১১)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
 يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيْمٍ-
সূদকে আল্লাহ মিটিয়ে দেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না’ (বাক্বারাহ - ২৭৬)

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, কোন এক ব্যক্তি বৃক্ষ ও পানি শূন্য প্রান্তরে ছিল। অতঃপর সে মেঘের কাছ থেকে শব্দ শ্রবণ করে যে, অমুকের উদ্যানকে পানি প্রদান কর। মেঘ কালো পাথরের পানে যায় ও পানি বর্ষণ করে। পানির একটি নালায় ঐ বর্ষিত পানি প্রবেশ করে এবং প্রবাহিত হ’তে থাকে। অতঃপর সে পানির পিছনে পিছনে যেতে আরম্ভ করে। সেখানে গিয়ে দেখে জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কোদাল দ্বারা নিজ বাগানে পানি ঘুরিয়ে দিচ্ছে। অতঃপর সে বাগান মালিককে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার কি নাম? উত্তরে সে বলল, অমুক। এটি সেই নামই ছিল যা সে মেঘের কাছে শ্রবণ করেছিল। বাগানের মালিক তখন আগন্তুক ব্যক্তিকে বলল, যে মেঘ এই পানি বর্ষণ করেছে তার কাছে এই শব্দ শুনেছি অমুকের উদ্যানে পানি বর্ষণ কর, আর সেটি হচ্ছে তোমার নাম। তুমি ঐ বাগানে কি কর? সে বলল, তুমি যখন জিজ্ঞেস করছ তখন বলি, বাগানে যা হয় তা আমি হিসাব করে দেখি এবং তিন ভাগ করি, এক তৃতীয়াংশ দান করি, এক তৃতীয়াংশ নিজে খাই, বাচ্চাদের খাওয়াই, আর এক তৃতীয়াংশ বাগানের জন্য খরচ করি’। (ছহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড ‘ভারত : মাকতাবাতুল ইত্তিহাদতা.বি.’, পৃঃ ৪১১)

আল্লাহর জন্যে হিজরত করা

আল্লাহর জন্য হিজরত করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় যেমন-
আল্লাহ তা‘আলা সুরা নিসা’য় বলেন,
وَمَنْ يُّهَاجِرْ فِيْ سَبِيْلِ اللّهِ يَجِدْ فِيْ الْأَرْضِ مُرَاغَماً كَثِيْراً وَسَعَةً وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِراً إِلَى اللّهِ وَرَسُوْلِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلى اللّهِ وَكَانَ اللّهُ غَفُوْراً رَّحِيْماً-
“যে কেউ আল্লাহর পথে দেশ ত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে। যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার ছওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়” (নিসা - ১০০)।

বিবাহ করা

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিবাহ করলে আল্লাহ তার সম্পদ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তাকে ধনী করে দিবেন । যেমন-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
 وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُوْنُوْا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ-
তোমাদের মধ্যে যারা ‘আইয়িম’ (বিপত্নিক পুরুষ বা বিধবা স্ত্রী) তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও; তারা অভাবগ্রস্ত হ’লে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ” (নূর – ৩২)
এই আয়াত প্রমাণ করে আনুগত্যশীল যুবক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিবাহ করলে আল্লাহ তাকে ধনী করবেন। এর তাফসীরে আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, التمسوا الغنى فى النكاحবিবাহর মাধ্যমে সম্পদ অন্বেষণ কর’

যাকাত প্রদান করা

যাকাত সম্পদকে বৃদ্ধি করে যেমন আল্লাহ বলেন,
وَمَا آتَيْتُمْ مِّن رِّباً لِّيَرْبُوَ فِيْ أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْ عِنْدَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُم مِّنْ زَكَاةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ-
“মানুষের ধন বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সূদের উপর যা দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাক তাই বৃদ্ধি পায়; তারাই সমৃদ্ধশালী” (রূম - ৩৯)

সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দো‘আ করা

সম্পদ বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং চাওয়া যেমন-
ঈসা ইবনে মারইয়াম দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! আমাদের প্রতি আকাশ হ’তে খাদ্য অবতীর্ণ করুন, যেন ওটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে এবং যারা পরে, সকলের একটা আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হ’তে এক নিদর্শন হয়ে থাকে। আর আমাদেরকে খাদ্য প্রদান করুন। বস্ত্ততঃ আপনি তো সর্বোত্তম খাদ্য প্রদানকারী’ (মায়েদাহ - ১১৪)

হজ্জ ও ওমরা সম্পাদন করা

হজ্জ ও ওমরা সম্পাদন করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীছটি প্রণিধানযোগ্য।
عن عبد الله ابن مسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لْلِحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةَ-
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হজ্জ ও ওমরা পরস্পর আদায় কর। কেননা সে দু’টি অভাব ও পাপকে মিটিয়ে দেয়, যেমন হাপর সোনা, চাঁদি এবং লোহার জংকে মিটিয়ে দেয়। আর কবুল হজ্জের ছওয়াব হ’ল জান্নাত’। (তিরমিযী, হা/৮১০)
এই হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, হজ্জ ও ওমরা করার ফল হচ্ছে দারিদ্র ও পাপ বিমোচন।
সুতরাং হজ্জ ও ওমরা আদায় কার এবং আদায়ের জন্য দোয়া করা ।

আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখা

আত্মীতার বন্ধন যেমন হায়াত কে বৃদ্ধি করে তেমনি সম্পদও বৃদ্ধি করে যেমন
আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি পসন্দ করে যে তার জীবিকা ও আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন তার আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে’। (ছহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৮৮৫)

দ্বীনী ইলম শিক্ষার্থীকে এবং গরীবদের সহায়তা করা

সম্পদ বৃদ্ধির আরো দুইটি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন রাসূল সাঃ আর তা হলো দ্বীনী ইলম শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা এবং গরিবদের সহায়তা করা-
আনাস (রাঃ) বর্ণিত হ’তে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে দু’ভাই ছিল। তাদের মধ্যে একজন (ইলম শিক্ষার জন্যে) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসত। অপর ভাই জীবিকার সন্ধানে যেত। জীবিকা সন্ধানকারী ভাই জ্ঞানার্জনকারী ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাসূলের নিকট (জীবিকা সন্ধান না করার) অভিযোগ আনে। উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, হ’তে পারে ভাইয়ের কারণে তোমাকে জীবিকা দেয়া হচ্ছে’।(তিরমিযী, হা/২৩৪৫)
মুছ‘আব বিন সা‘দ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, সা‘দ মনে করতেন যে, গরীব ও দুর্বলদের উপর তাঁর মর্যাদা আছে। সেজন্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা সাহায্য ও রিযক প্রাপ্ত হয়ে থাক তোমাদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তাদের কারণে’।(ছহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ৪০৫)

কাজ করা

সর্বপরি যথেষ্ট প্রচেষ্ট এবং পরিশ্রম করা যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
“ছালাত সমাপ্ত হ’লে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও: (জুম‘আহ - ১০)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
“আর তোমরা আকাঙ্খা কর না এমন সব বিষয় যাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা সর্ব-বিষয়ে জ্ঞাত” (নিসা - ৩২)

সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহ চাওয়ার পাশাপাশি কাজ করা এবং কঠোর প্রচেষ্টা করা । আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল পথে তৃপ্তি সহকারে উপার্যনের তৌফিক দান করুন আমিন ।


Post a Comment

Thank you for your Comment

Previous Post Next Post

Contact Form